বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দুপচাঁচিয়ায় ভাগ্নিকে ধ র্ষণের অ ভিযোগে খালু গ্রে ফতার উপজেলা নির্বাচন ২০২৪ নোয়াখালী,বেগমগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধীতে আরসিআরইউ’র শ্রদ্ধা বগুড়ার সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে আইফোন জিতলেন আরিফ শেখ দুপচাঁচিয়ায় জোহাল মাটাইয়ে ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাবনায় গৌরবদীপ্ত বিজয় দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে বগুড়ায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন ফাঁপোর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মেহেদী হাসান বগুড়ায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার সেন্টার পরিদর্শন দুপচাঁচিয়ায় বিউটি পার্লারে অভিযান জরিমানা

মারিয়া এবং তার বন্ধু

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯
  • ১৭১৩ ভিউ টাইম

লেখক: সবনাজ মোস্তারী স্মৃ­তি: বাইরে ভিষন বৃষ্টি হচ্ছে। চার পাঁচ দিন ধরে বেশ ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে যাবার যো নেই। মারিয়া পুতুল নিয়ে জানালার পাশে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে বৃষ্টি দেখছে।
মায়ের কথা ভিষন মনে পড়ছে। এমন বৃষ্টির দিনে বাইরে যাবার জন্য বায়না করতো মারিয়া আর মা তাকে জোর করে ঘরে আটকে রাখত।কিন্তু আজ মারিয়া বাইরে যেতে চাইছে না। আকাশের মত মারিয়ারও মন খারাপ।এগারো বছরের একটা ছোট মেয়ে হয়েও মারিয়াকে এখন মনে হচ্ছে একুশ বছরের মত একটা গম্ভীর মেয়ে। তার কারন মারিয়ার মা একমাস আগেই গত হয়েছেন।
হঠাৎ মারিয়ার বাবা মারিয়ার ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো আমার প্রিন্সেসটা কি করে?
মারিয়া নড়েচড়ে বসল।কিন্তু কথা বলল না। মা মরার পর থেকে মারিয়া কারো সাথেই কথা বলে না ভালোভাবে।
মারিয়ার বাবা মারিয়াকে কোলে টেনে নিয়ে বসে তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আমার প্রিন্সেসটাকে আর একাএকা থাকতে হবে না। প্রিন্সেসের জন্য নতুন মা নিয়ে আসবো।নতুন মা নিয়ে আসার কথা শুনে মারিয়ার মুখে হাসি ফুটে। বাবার গলা ঝরিয়ে ধরে বলে সত্যি বাবা আমার জন্য নতুন মা নিয়ে আসবা???
মারিয়ার বাবা বলে আমার প্রিন্সেসটার জন্যতো আনতেই হবে।
দুদিন পরেই মারিয়ার বাবা বিয়ে করে। নতুন মাকে নিয়ে আসে মারিয়ার কাছে। নতুন মা মারিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে খুব আদর করে।মেয়েকে আদর করতে দেখে মারিয়ার বাবা খুব খুশি হয়।
বেশ কয়েকদিন ভালো ছিলো সব কিছু। মারিয়ার বাবা মনে করেছিলো নতুন মা মারিয়াকে ঠিক কার নিজের মায়ের মতই আগলে রাখবে।
কিন্তু মারিয়ার নতুন মা মারিয়াকে হোমে পাঠিয়ে দেবার জন্য মারিয়ার বাবাকে ভিশন ভাবে জোর করে। নানা রকম কথা বলে মারিয়াকে হোমে পাঠিয়ে দেবার জন্য সব কিছু বন্দবস্ত করে ফেলে।
মারিয়ার বাবা মারিয়ার কাছে গিয়ে বলে মা তুমি তো বাড়িতে কারো সাথে খেলতে পারো না, গল্প করতে পারো না তাই আমি আর তোমার নতুন মা ঠিক করেছি তোমাকে হোমে রেখে আসবো সেখানে তুমি অনেক বন্ধু পাবে। তাদের সাথে খেলতে পারবে, ছবি আকতে পারবে,গল্প করতে পারবে।
মারিয়া তার বাবার কথা শুনে বলে বাবা আমি তোমার কাছে থাকবো আমি কোথাও যাবো না।
অনেক বুঝানোর পরও মারিয়া যখন হোমে যেতে রাজি হচ্ছিলো না তখন মারিয়ার বাবা মারিয়াকে ধমক দিয়ে বলে আমরা যখন ঠিক করেছি তোমাকে হোমে যেতে হবে, তার মানে যেতে হবে।তোমার কোনো কথা আমরা শুনবো না।তোমার ভালো চাই আমরা।এগার বছরের মারিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না মা মারা যাবার পর বাবা অনেক পর হয়ে যায়।
পরের দিন মারিয়ার বাবা আর নতুন মা মারিয়াকে হোমে রেখে আসে। হোমে ঢুকতেই একটা বিশাল লোহার দড়জা।চারদিকে উচু দেওয়াল।দেয়ার ওপর আবার তারকাটা।বাইরে বের হবার কোনো রাস্তা নেই বড় দড়জা ছাড়া।
মারিয়াকে রেখে তার বাবা মা চলে যায়।মারিয়া অসহায়ের মত তার বাবা আর নতুন মায়ের চলে যাওয়া দেখে।বারবার ইচ্ছে করছে তার বাবার কোলে দৌড়ে গিয়ে উঠতে কিন্তু বাবা ভিষন পর হয়ে গেছে।বাবা আর নতুন মা চলে যাবার পর দাড়ুয়ার দড়জায় তালা দিয়ে দিলো।
মারিয়ার ভিশন কান্না পাচ্ছে।মনে মনে বলছে মা তুমি কেনো আমাকে রেখে আকাশে চলে গেলে।দেখো বাবা আমাকে এখানে একা রেখে চলে গেলো।মা তুমি বলো আমি তো একা ঠিক মত খেতে পারি না, আমার তো গল্প না শুনলে ঘুম হয় না। এখানে আমাকে কে খাইয়ে দিবে?কে ঘুম পারিয়ে দিবে মা।
মারিয়া ঠিক যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাড়িয়ে রইল।হোমের একজন টিচার এসে বলল এই পিচ্চি মেয়ে কী করো যাও নিজের রুমে যাও।
মারিয়া কিছু না বলে সিড়ির দিকে তার ভারি ব্যাগ নিয়ে হাটতে শুরু করলো।সিড়িতে উঠতে যাবে ঠিক সেই সময় জলহস্তির মত একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।
আসলে মারিয়ার কাছে জলহস্তি মনে হলেও তিনি আসলে হোমের ম্যাম মিসেস কিমলিন।
বাঘের মত গর্জন দিয়ে মারিয়াকে বলল কিরে বাচা তুই দেখে সিড়ি দিয়ে উঠতে পারিস না। পড়ে হাত পা ভাঙ্গে আমাদের হোমের দুর্নাম করবি নাকি?মারিয়া কিছু না বলে উঠে দাড়িঁয়ে মাথা নিচু করে বলে সরি ম্যাম।
মিসেস কিমলিন বলে তুই তো নতুন তোর বাবা মা তকে আজ ভর্তি করে গেলো। তুই কি জানিস তোর রুম কোথায়?
মারিয়া আবারও মাথা নাড়িয়ে বলে না ম্যাম।
মিসেস কিমলিন আবার গর্জন করে বলে তাহলে এদিক দিয়ে কয় যাচ্ছিলি?
চল আমার সাথে অফিসে তোকে তোর রুম নম্বার বলে দি।
মারিয়া মিসেস কিমলিনের পিছন পিছন হাটতে শুরু করল অফিসের দিকে।
মিসেস কিমলিন খাতা দেখে মারিয়াকে বলল সামনের সিড়ি দিয়ে গিয়ে চার তলার বা দিকের ৪৩২ নম্বার রুমে ২ নম্বার বিছানাটা তোর। যা ব্যাগ পত্র নিয়ে গিয়ে ঠিক মত গুছিয়ে নে।
মারিয়া মলিন মুখ নিয়ে ভারি ব্যাগটা তুলে তার রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
মারিয়ার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখানে কান্না করলেও ধমক খেতে হয়। হঠাৎ পিছন থেকে মারিয়ার সমবয়সী একজন ডেকে বলে তুমি কি নতুন এসেছ?
মারিয়া পিছন ফিরে দেখে তার মতই একটা মেয়ে হাতে বই নিয়ে তাকে প্রশ্নটা করল।মারিয়া হ্যা সুচক মাথা নাড়াল।মেয়েটি বলল আমার নাম স্পর্স।
স্পর্স মারিয়ার দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল তোমার কি ঐ দৈত্য ম্যামের সাথে দেখা হয়েছিলো?
মারিয়ার বুঝতে বাকি রইল না মিসেস কিমলিনের কথা বলছে স্পর্স।
মারিয়া হাসতে হাসতে বলল তুমি মিসেস কিমলিন ম্যামের কথা বলছ???
স্পর্স মুখ বাকিয়ে বলল আমরা তো সবাই দৈত্য ম্যাম বলি। তারপর মারিয়া আর স্পর্স দুজনেই খুব মুখ চেপে ধরে হাসলো।
স্পর্স জিজ্ঞেস করলো তোমার রুম কোথায়?
মারিয়া বলল চারতলায় ৪৩২ নম্বার রুমের ২ নম্বার বেড।
স্পর্স খুশিতে হাত তালি দিয়ে বলল আমিও ঐ রুমে থাকি। চলো তোমাকে নিয়ে যায়।
প্রথম দিনেই স্পর্সের সাথে মারিয়ার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
স্পর্স ক্লাস ওয়ান থেকে এখানেই থাকে।
তাই স্পর্সের প্রায় সব কিছুই জানা এই হোমের।মারিয়া তার জামা কাপড়, বই সব কিছু গুছিয়ে নিলো সাথে স্পর্সও সাহায্য করলো সব কিছু গোছাতে।
গোছানো শেষে স্পর্স মারিয়ার হাত ধরে ডাইরিং এ গেলো সেখানে তার আরো অনেকের সাথে পরিচয় হলো।
মারিয়ার এখন অনেক বন্ধু। আর সব থেকে ভালো বন্ধু স্পর্স।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলে মারিয়ার মায়ের কথা খুব মনে হয়। ভিষন ভাবে কান্না পাই বালিশে মুখ বুঝে সে মারিয়া কাঁদে।
কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়ে মারিয়া।
সকাল ৫ টাই স্পর্স ব্রাশ করতে করতে এসে মারিয়াকে ডাকে।
“এই মারিয়া উঠে যা তাড়াতাড়ি তানাহলে দৈত্য এসে যদি দেখে এখনো ঘুমাচ্ছিস তাহলে খুব পানিসমেন্ট দিবে ”
স্পর্সের কথা শুনে মারিয়া ঝটপট উঠে পড়ে।
ফ্রেস হয়ে হোমের ড্রেস পড়ে স্পর্স আর মারিয়া একসাথে ক্লাসে যায়।দুজনে এক সাথে বসে। মানিয়ার ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে পানি খাওয়া নাম করে ক্লাস থেকে বের হয়ে হোমের এদিক ওদিক ঘুরে বেরাচ্ছে মনে সুখে।মিসেস কিমলিন তা জেনে গেলে মারিয়াকে অফিসে ডেকে পাঠায় । তারপর খুব বকাবকি করে আর পানিসমেন্ট দেয় দুপুরে তার খাওয়া বন্ধ।
মারিয়া মন খারাপ করে তার রুমে চলে যায়।
দুপুরে স্পর্স ডাইনিং থেকে তার খাবার চুপ করে নিয়ে গিয়ে মারিয়াকে ফিসফিস করে বলে এ মারিয়া উঠ তাড়াতাড়ি চল দুজনে খেয়ে নি। দৈত্যটা দেখে নিলে দুজনের খাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাবে।
দুজনে হাসতে হাসতে একে অপরকে খাইয়ে দেয়।
মারিয়া আর স্পর্সের দিনগুলো এভাবেই খুব সুন্দর যেতে থাকে মিসেস কিমলিনের হাজারো পানিসমেন্ট পেয়েও।
#সমাপ্ত

দয়াকরে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরী আরো খবর...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

Developed By VorerSokal.Com
newspapar2580417888