নাছির উদ্দিন আবির
করোনার ভয়াবহ থাবায় আক্রান্ত পুরো পৃথিবী। বাংলাদেশও এযাত্রায় রক্ষা পায়নি এ মহামারির হাত থেকে। থেমে গিয়েছে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা। উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক কঠিন এ অবস্থা সামাল দিতে পারলেও আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে তা সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ মানুষই যেখানে নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের সেখানে ‘লক-ডাউন’ নামের শব্দটি এদেশের মানুষের জন্য বিশাল এক অভিশাপ।
সময়ের প্রয়োজনে দেশের মানুষের কল্যানে বারবার বাড়ানো হচ্ছে দেশের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর ছুটি। দেশের চলমান এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পেশার মানুষ গড়ে তুলছে বিভিন্ন সংগঠন। তেমনি এক সংগঠনের কথা বলছি আজ, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বন্ধু বাজার’
সাতক্ষীরার কলােরায়া উপেজলার চন্দনপুর নামক গ্রামের কলেজ মোড়ে চন্দনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালেয়র এসএসি ২০১৪ সালের ব্যাচ কর্তৃক পরিচালিত হয় এই ‘বন্ধু বাজার’। উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানের ১ম দিন থেকেই শুরু করা হয়েছে তাদের এই কার্যক্রম এবং অব্যাহত থাকবে সারা রমজান মাসব্যাপী।
মূলত তারা রমজান মাসে বাজারের এই চড়া দামে সবজি কেনা থেকে সাধারণ জনগণকে কিছুটা রেহাই দিতে সরাসরি সবজি চাষের ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে নামে মাত্র কিছু টাকা লাভ রেখে দোকানে এনে এই সবজি বিক্রয় করেন।
উদ্যোক্তাদের একজন আবু সোহান ‘বন্ধু বাজার’ সম্পর্কে জানান, “চলমান এই পরিস্থিতিতে গ্রামের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের উপার্জন করার প্রায় সকল পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে টাকা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে আবার রমজান মাস। অন্যান্য দেশে এ মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে বেশিরভাগ জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাহিরে চলে যায়। তারমধ্যে আবার সারা দেশ লকডাউন। তাই আমরা চলমান পরিস্থিতিতে সংকটময় অবস্থাকে কিছুটা সহজ করতে এবং রোজার মাস কে টার্গেট করে মানুষের হাতে স্বল্প মূল্যে টাটকা সবজি পৌছে দিতেই এই উদ্যোগ গ্রহন করি।”
বন্ধু বাজারের নামকরণের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে সাব্বির নামের একজন জানায়, “আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের ফান্ড দিয়েই দোকানটা পরিচালনা করি বিধায় এর নাম ‘বন্ধু বাজার’ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন তার ব্যাচের যে সকল শিক্ষার্থী বন্ধুরা ফান্ডে টাকা দিয়ে সহায়তা করতে পারেনি চাইলে তারা শ্রম দিয়েও যেন এ কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যাবস্থাও রাখা হয়েছে। দোকানের লাভ লোকসানের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, লোকসান নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই তবে লাভ হলে মূল অর্থটা সবাইকে ফেরত দিয়ে লাভের অংশ দিয়ে ঈদে এলাকার অসহায় মানুষদের সেমাই কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের।
দেনা-পাওনার কথা জিজ্ঞেস করলে সাব্বির বলেন, “আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই দেশের স্বনামধন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই যার যার প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবো, দেশের এ চরম সংকটময় মূহুর্তে ঘরে বসে অলস সময় কাটানোর চেয়ে দেশের মানুষের পাশে থাকতে পেরে নিজেদের কাছেও ভালো লাগছে এছাড়া মানুষের থেকে স্নেহ, ভালোবাসা এবং দোয়া পাচ্ছি, এতেই বা কম কিসে!”
দোকান পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাব্বির জানায়, “আমাদের মধ্যে আবু বাশার, আবু সোহান, সাঈদ, সবুজ এবং আমি মিলে উদ্যোগ টা গ্রহন করি। আমরা শিফট ভাগ করে সবাই এখানে কাজ করে থাকি। সোহান এবং আমি জমি থেকে সবজি সরবার করি, বাকি সবাই দোকানেই কাজ করে।
চলমান পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার থেকে কোন বাধা এসেছে কিনা জানতে চাইলে তারা জানায়, প্রথম দিকে একটু-আধটু বাধা আসতো তবে এখন পরিবারের সবাই তাদের নিয়ে গর্ববোধ করে। এছাড়াও তারা তাদের দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি হ্যান্ড গ্লাভস এবং মাস্ক পরিধান করেই কাজ চালায়। এমনকি হ্যান্ড ওয়াশ এবং জীবানু নাশক স্প্রে’রও ব্যাবস্থাও রয়েছে তাদের দোকানে। তাদের এ কার্যক্রম এলাকার সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা চায় দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে ঘরে বসে না থেকে সবাই যেন দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু না কিছু কাজ করে। তাহলেই সকল সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সবার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।
Leave a Reply