সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে পালিত হ্যলো  মহান স্বাধীনতা দিবস ঝিনাইগাতীতে ঝিনাইগাতীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কুপিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে  আহত বাংলাদেশ প্রেসক্লাব বগুড়া জেলা শাখার মহান স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ঝিনাইগাতীতে গণহ”ত্যা দিবস পালিত ঝিনাইগাতী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থাদের বিদায় ও নবীনদের বরণ বগুড়ায় মাদক বিরোধী অভিযানে গাঁজা ও ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেফতার – ১ বগুড়ায় অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করা সেই বিচারক প্রত্যাহার বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির কথা বলে প্রতারনা, গ্রেফতার – ১ ঝিনাইগাতীতে মুজিববর্ষে ৭৫ জন ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘড়ের চাবি হস্তান্তর বগুড়া সদরে দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান

সেলুনের ভেতর পাঠাগার, চলে চুল কাটানো আর বইপড়া

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ জুন, ২০১৯
  • ১৩৯০ ভিউ টাইম

গ্রামের অতি সাধারণ মানের একটি সেলুন। ভেতরে বইয়ের সেলফ। প্রায় চার শ বই রয়েছে তাতে। এই দোকানে খরিদ্দার হিসেবে যাঁরা আসেন, তাঁরাতো বটেই, অন্যরাও আসেন বইয়ের টানে। বই পড়েন ভেতরে বসে। অনেকে আবার বাড়িতেও নিয়ে যান বই।

দোকানের মালিক মিলন শীল নিজের আগ্রহে  সেলুনেই গড়ে তুলেছেন পাঠাগারটি। কাজীবাছার তীরে খুলনার বটিয়াঘাটা বাজারের এই ব্যতিক্রমী সেলুনে শুক্রবার হাজির হয়েছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের বন্ধুরা। তারাও কিছু বই তুলে দেন ওই পাঠাগারে।

মিলন শীলের বাবা জীবিকার তাগিদে বটিয়াঘাটা বাজারে এই সেলুনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাত্র ১৩  বছর বয়সে মিলনও বাবার হাত ধরে এই দোকানে হাজির হন। পাশের হেতালবুনিয়া গ্রাম থেকে  প্রতিদিন দোকানে আসেন। শিশু বয়সেই রোজগারের জন্য নেমে পড়ায় লেখাপড়ায় ইতি ঘটে। লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও তাদের ছিল না। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। বয়সীরা দোকানে এসে শিশুটির কাজ করা দেখে আক্ষেপ করতেন। এসব দেখে-শুনে শিশুটির মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ তৈরি হয়।

প্রথম দিকে খবরের কাগজ রাখা হতো সেলুনে। শিশুটি তাই পড়তে থাকেন। মাত্র চতুর্থ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করা মিলনের পড়াটা ঠিক আয়ত্বে ছিল না। বেশ কিছুদিনের চেষ্টায় তিনি পড়াটা আয়ত্বে আনেন। আচমকা একটি ঘটনা ঘটে।

একদিন দোকানের এক খরিদ্দার হাতে একটি বই নিয়ে আসেন। দোকানে অপেক্ষা করার সময় তিনি বইটি পড়ছিলেন। পরে বইটি ফেলে রেখেই চলে যান। মিলন পরম মমতায় বইটি হাতে তুলে নেন। পড়তে শুরু করেন। উপন্যাস। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মেজদিদি। বইটি তিনি একবার নয়, তিনবার পড়েন। বইয়ের কাহিনীতে তিনি আবেগাপ্লুত হন। চোখের কোণ ভিজে যায়। এ থেকেই শুরু হয় বইয়ের প্রতি দুর্বার এক আকর্ষণ।

মিলন বই সংগ্রহ করতে শুরু করেন। নিজে পড়েন, অন্যদের পড়তেও দেন। ধীরে ধীরে বইও সংগ্রহ হতে থাকে। বাড়িতেই বইগুলো ছিল। সেখান থেকে বন্ধুরা বই নিতেন, আর ফেরত দিতেন না। এতে মন খারাপ হতো। আবার ভালোও লাগতো, তারাতো বই পড়ছে। একসময়ে এক বন্ধু তাকে একটি মিটসেফ দেন। সেই মিটসেফ-এ কাঁচের পাল্লা বসিয়ে বইয়ের আলমারি  তৈরি করা হয়। তাতেই রাখা হয় জোগাড় করা বইগুলো।

বাজারের একটি ঘরে ওই আলমারির বই নিয়ে শুরু হয় পাঠাগারের কার্যক্রম। সেখানেই চলতো পঠন-পাঠন। একটি পৃথক ঘর পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অর্থ ও সময়ের দুই ঝক্কি বাদ দিয়ে নিজের সেলুনেই আলমারি নিয়ে হাজির হন। মিলনের সেলুনটিই হয়ে ওঠে একের মধ্যে দুই -রোজগারের কেন্দ্র ও পাঠাগার।

এই পাঠাগারে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্রসহ সেরা লেখকদের বই। বইগুলোর অধিকাংশই কিনেছেন মিলন। আর কিছু বই বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। সেলুনে কেউ চুল কাটাতে এলে সময় কাটানোর জন্য তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয় বই। অপেক্ষার সময়টি বই পড়ে দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায়। চাইলে একটি খাতায় নাম, ঠিকানা লিখে বই বাড়িতেও নিতে পারেন পাঠক।

সেলুন চালানো আর বইপড়ার পাশাপাশি মিলন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন।

মিলন বলেন, উপজেলায় কোনো পাবলিক লাইব্রেরি নেই। এ কারণে সেলুনে সব সময় বইপ্রেমীদের ভিড় থাকে। পুরনো লেখকদের বই পড়তে তাঁর ভালো লাগে বিধায় তাঁদের বই তাঁর সংগ্রহে বেশি। সেলুনের মধ্যে লাইব্রেরি গড়ায় ২০১৬ সালে ‘ঘুম ভাঙ্গানিয়া’  নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলন শীলকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেয়। বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাঁর হাতে ওই স্মারক তুলে দেন।

সেলুনে বই পড়তে আসা হারুন বলেন, বইয়ের টানে এক ধরনের ভিন্ন আড্ডার স্বাদে এই দোকানে সকল বয়সী মানুষ ভিড় জমান।

ভিন্নধর্মী এই বইপ্রেমী মানুষটির সান্নিধ্যে শুক্রবার সকালে কালের কণ্ঠ পাঠক ফোরাম শুভসংঘের খুলনার কয়েকজন বন্ধু হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা মিলনের সঙ্গে কথা বলেন, জানতে চান তাঁর পাঠাগার গড়ার পিছনের ইতিহাস। তাঁর হাতে তুলে দেন ১১টি বই।

উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘ খুলনার সভাপতি কানাই মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ, নূরুদ্দীন মো. ইদ্রিস, বিপুল কান্তি চৌধুরী, কার্তিক রুদ্র, জাহাঙ্গীর ফকির, বিশ্বজিত বিশ্বাস, মো. ইমরান হোসেন, গৌরাঙ্গ নন্দী প্রমুখ।

দয়াকরে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরী আরো খবর...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

Developed By VorerSokal.Com
newspapar2580417888