NEWS DEx কোনও অযোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি এবং যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়নি দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছেন, কোনও কোনও আবেদনকারী ভুল তথ্য দিয়ে এমপিওর তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাদেরকে চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। সরকারি হওয়া প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয় সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়েছে। সেটিও তালিকায় এসেছে, এটা একটা ভুল তবে, দুই হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই একটি ভুল যা কোনও শতাংশের হিসেবে আসে না।
সদ্য ঘোষিত ২৭৩০ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বিষয়ে নানা অসঙ্গতি এবং জনমনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন দানা বাঁধায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমন ব্যাখ্যা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পলাশীর ব্যাংলাদেশে শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো ( ব্যানবেইস) সম্মেলন কক্ষে এমপিও নিয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী। দৈনিকশিক্ষা ডটকমে এমপিওভুক্তির অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে প্রকাশিত সবকটি প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দেন মন্ত্রী।
এমপিওভুক্তিতে ভুলের দায় কার? সাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোনও ভুল হয়নি তাই শাস্তির প্রশ্ন আসে না।’
যুদ্ধাপরাধীদের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওর তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদের নাম পরিবর্তন করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। দৈনিক শিক্ষায় গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত ‘যুদ্ধাপরাধী, বিএনপি ও জামাত প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানও এমপিওর তালিকায়’ শিরোনামের প্রতিবেদনে তুলে ধরা তথ্য সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠান কারো নামে হলেও তা যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। তাই এমপিওভুক্ত হয়েছে। তবে, যুদ্ধাপরাধীদের নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তনের কাজ চলমান রয়েছে।
ভুল তথ্য দিয়ে যারা এমপিওভুক্তির তালিকায় ঢুকেছেন তাদেরকে বাদ দেয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হয়নি। সব যোগ্য প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে তাতে কোন অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা বা কোনো যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত না করার কোনো সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ এমপিওভুক্তির নীতিমালা পরিপূর্ণ অনুসরণ করা হয়েছে। এবিষয়ে অতিরঞ্জিত অথবা ভুল সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য আহবান জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তির শর্ত অনুযায়ী এমপিওভুক্তির আদেশ জারির পর যেকোন পর্যায়ে যদি প্রমাণিত হয় যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি কোনো শর্ত ভঙ্গ করেছে বা অসত্য তথ্য প্রদান করে এমপিওভুক্ত হয়েছে, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আদেশ কার্যকর হবে না। পাশাপাশি অসত্য তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমপিওভুক্তির কার্যক্রম এবং সরকারিকরণের কার্যক্রম দুটি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে সম্পাদিত হয়েছেে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের একটি স্তর সরকারিকরণের পরেও এমপিওভুক্ত হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি সরকারিকরণ হয়। তার আগেই এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হয় এবং চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এ বিষয়ে কেউ রিপোর্ট না করায় এই বিভ্রান্তি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, এটা এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম নয়। সরকারিকরণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কোন প্রয়োজন না থাকায় এ আদেশ উক্ত প্রতিষ্ঠান জন্য স্বাভাবিকভাবেই কার্যকর হবে না।
অন্যদিকে পূর্বে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের একটি স্তর আবারো এমপিওভুক্ত হয়েছে বলে যে সংবাদ পরিবেশিত তার ব্যাখ্যায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যে স্তর ইতিমধ্যে এমপিওভুক্ত হয়েছে সে স্তরের জন্য তাদের পুনরায় আবেদন করার কথা নয়। সম্ভবত তারা ভুলক্রমে এমপিওভুক্ত স্তরের জন্যই পুনরায় আবেদন করেছে। প্রকৃত অর্থেই তারা এই ভুল করেছে কিনা তা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি হয়ে থাকলে এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এটি অনিয়মের মধ্যে পড়ে না বলেও দাবি করেন তিনি।
এমপিওভুক্তির আদেশ জারির পরে একটি প্রতিষ্ঠান রাতারাতি ভবন নির্মাণ করেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জানার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী যেসব তথ্যাদির ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে সেসব তথ্য ভুল বা অসত্য প্রমাণ হলে তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শতভাগ নিয়মকানুন অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
এমপিওভুক্তির আদেশ জারি হওয়ার পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রে বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত ব্যক্তি এবং স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তির নামে বা বিতর্কিত কোনো রাজনীতিকের নামে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত ব্যক্তিদের নামে প্রতিষ্ঠিত চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ পূর্বক শিক্ষামন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে চলছে বলে জানানি শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি একটি চলমান কার্যক্রম। স্থানীয় পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ সংক্রান্ত সব তথ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন বা স্থানীয় জনগণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আনলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, যেহেতু এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোন রকম রাজনৈতিক বিবেচনা করা হয়নি, শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়েছে, সেহেতু কোনো বিতর্কিত রাজনীতিকের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একইভাবে নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।
এমপিওভুক্তির জন্য স্বীকৃতি একটি অন্যতম শর্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে নিজস্ব ভবন না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষাক্রম নিজস্ব ভবনের মধ্যে পরিচালনা করা হবে বলে শর্ত আরোপ করা হয়। কেউ যদি এই শর্ত পালন না করে থাকে এবং এ আদেশে এমপিওভুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তীতে পরীক্ষাকালে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, নতুন এমপিওভুক্তির জন্য গত বছরের আগস্টে আবেদন করে নয় হাজার ৬১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। এরমধ্যে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে সাত হাজার ১৫টি প্রতিষ্ঠানই অযোগ্য। তার মানে তথ্য যাচাইয়ের জন্য সময় পেয়েছে এক বছরেরও বেশি। যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদ।
নীতিমালা অনুযায়ী চার শর্ত পূরণকারী প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রতিষ্ঠানের বয়স বা স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। প্রতিটি পয়েন্টে ২৫ করে নম্বর থাকে। কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং স্বীকৃতির বয়স পূরণ করলে শতভাগ নম্বর দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর পাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে। এবার আবেদন করা প্রায় ৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা ও শর্তপূরণ করতে না পারায় এমপিও পায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই অনলাইনে তথ্য দিয়েছে। কিন্তু এমপিও তালিকা প্রকাশে দেখা গেছে, তথ্য যাচাই হয়নি। এ কারণে প্রায় অর্ধশত অযোগ্য অথবা প্রায় অস্তিত্বহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত, শিক্ষার্থী নেই, পাস নেই, স্কুল ঘর নেই এবং সরকারি হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিও পেয়েছে। এতে বোঝা যায় তালিকা যাচাই-বাছাই কতটা উদাসীনভাবে হয়েছে।
এদিকে, যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় পেলেও এমপিওভুক্তির নির্ভুল তালিকা করতে না পারার দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। তালিকাভুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় গড়পড়তা সমালোচনা শুনতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। এইসব অদক্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক শিক্ষাসচিব ও দৈনিক শিক্ষার প্রধান উপদেষ্টা মো. নজরুল ইসলাম খান।
প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় অযোগ্য, প্রায় অস্তিত্বহীন, যুদ্ধাপরাধের আসামি প্রতিষ্ঠিত, সরকারিকৃত এবং পুরনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে মন খারাপ করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান নেপথ্য কারিগর ও স্মরণকালের সেরা শিক্ষাসচিব এন আই খান। জার্মান ও যুক্তরাজ্য সফররত এন আই খান শনিবার টেলিফোনে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘দৈনিক শিক্ষায় দেখলাম প্রায় অস্তিত্বহীন, যুদ্ধাপধরাধী প্রতিষ্ঠিত, সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানও এমপিওর তালিকায়। শুধু তাই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্ভোধন হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় দক্ষতার সাথে পুরো তালিকা ওয়েবসাইটে দিতে পারেনি। সনাতন পদ্ধতিতে নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দিয়েছে যা শুনে মন খারাপ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ফেসবুকের ইনবক্সেও ডজন ডজন অনিয়মের তথ্য পেলাম। এই দূর দেশে বসে এসব শুনে মন খারাপ হয়েছে বেশি। সংক্ষুব্ধরা সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগ সরকারের। অথচ এই ভুল তালিকার দায় মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তার। ভুলের জন্য সফটওয়্যারের দোহাই দেয়াকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যারে সঠিক ইনপুট দেয়ার যোগ্যতার ঘাটতি ছিল কর্মকর্তাদের।’
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply