বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ায় বালু দস্যুরা বেপরোয়া। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনরাত ভুগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে চলেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এতে হুমকির মুখে পড়েছে নাগর নদের ওপর নির্মিত রেলব্রীজ, সড়ক ব্রীজ, নদীর বাঁধ ও ফসলী জমি।
ঐতিহ্যবাহী তালোড়া বন্দরের রেলগেট হতে পূর্ব পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া নাগর নদের বাঁধ সংলগ্ন রেলওয়ে ও সরকারী জমিকেই বালূ দস্যুরা বালু উত্তোলনের নিরাপদ পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর এখানেই দীর্ঘদিন যাবত শ্যালো চালিত ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী স্থানীয় বালু দস্যুরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নাগর নদের ওপর নির্মিত রেলব্রীজ ও সড়ক ব্রীজ, স্লুইচগেইট, নদীর বাঁধ সহ আশপাশের গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি। অপরদিকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতায় বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এবারের বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকায় আতংকিত এলাকাবাসী। সম্প্রতি সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায় নদীর বাঁধের উপর দিয়ে ঘন ঘন বালুর ট্রাক যাতায়াত করতে। স্থানীয় বালুদস্যুরা নদীর বাঁধ বেশিরভাগই কেটে ফেলে চালাচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এখন সরু এ বাঁধের উপর দিয়ে ট্রাক যাতায়াতের ফলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। বাঁধ সংলগ্ন জমিগুলোয় বিশাল এলাকা জুড়ে ভেকু মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে আগে মাটি বিক্রি করা হয়েছে এরপর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত তোলা হচ্ছে বালু। পাশের ধানক্ষেত সহ ফসলী জমি অনেকটাই ভেঙে গেছে, কৃষকের আলুর ক্ষেত ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। দুরে থেকে বোঝায় উপায় নেই এখানে এত বড় আকারে অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে। পাশের সাবলা গ্রামের এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বালু তোলার ফলে আমার জমি গর্তের সৃষ্টি হয়ে ডেবে গেছে তাই বাধ্য হয়ে তাদের কাছে কম দামে দিয়ে দিয়েছি। এ রকম আরো অনেকেই বিপদে পরে বাধ্য হয়ে জমি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন এই পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ১শর উপরে বালু ভর্তি ট্রাক যায়। বালু দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না।
এলাকাবাসী জানান, সাবলা গ্রামের ছায়েত আলী প্রামানিকের ছেলে আমিনুর রহমান আমিন, দুুলাল প্রামানিকের ছেলে রতন প্রামানিক ও একই গ্রামের হযরতের ছেলে তালোড়া পৌর কাউন্সিলর এমরান আলী রিপু এই পয়েন্টগুলোর মালিক। বালু ব্যবসা করেই তারা আজ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, লাখ লাখ টাকার মালিক। করছে বিলাসী জীবন যাপন।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে ভ্রাম্যমান আদালত এই পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করে আমিনকে ১ মাসের কারাদন্ড দেয়। জেল থেকে বেরুবার আগেই তার নিদের্শে পুনরায় একই স্থানে বালু উত্তোলন শুরু করে তার শ্রমিকরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বালু দস্যুদের পরিচয় প্রকাশ করে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মানুষরা।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply