বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দুপচাঁচিয়ায় ভাগ্নিকে ধ র্ষণের অ ভিযোগে খালু গ্রে ফতার উপজেলা নির্বাচন ২০২৪ নোয়াখালী,বেগমগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধীতে আরসিআরইউ’র শ্রদ্ধা বগুড়ার সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে আইফোন জিতলেন আরিফ শেখ দুপচাঁচিয়ায় জোহাল মাটাইয়ে ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাবনায় গৌরবদীপ্ত বিজয় দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে বগুড়ায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন ফাঁপোর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মেহেদী হাসান বগুড়ায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার সেন্টার পরিদর্শন দুপচাঁচিয়ায় বিউটি পার্লারে অভিযান জরিমানা

এমএ পাস করেও তিনি নাটোরের একটি হোটেলে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করছে নজরুল

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৫৭৬ ভিউ টাইম

আশরাফুল ইসলাম সুমন সিংড়া :নাটোরের শহরের চকরামপুর এলাকায় অবস্থিত বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টের ভিতরে বাবুর্চি খানায় নাইট শিফটে থালাবাসন পরিস্কার ও ধোয়া মোছার কাজ করেন নজরুল ইসলাম।

শহরের পরিচিতজন এবং সহপাঠীদের সাথে দেখা হবে এ লোকলজ্জার ভয়ে বাবুর্চি খানার বাহিরে আসেননা।

রাত ৯ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত একটানা ১২ ঘন্টা ঠান্ডা পানিতে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করে বেতন পান তিনশো টাকা। সে টাকায় চলে বৃদ্ধ মা আনোয়ারা বেওয়া,বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী কুইন খাতুন এবং চার বছরের ছেলে হাসিবুর রহমান হিমেল সহ চার সদস্যের সংসার।

নাটোর সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের বড়বড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। ৮ ভাই এবং ৬ বোনের মধ্যে নজরুল সবার ছোট।

কৃষক বাবা জমির উদ্দীনের মৃত্যুর পর অন্যের জমিতে ক্ষেতমজুরী কাজ করেই কলেজের পাঠ চুকিয়েছেন।

এম এ সার্টিফিকেটটি পেলে অন্যের জমিতে কাজ করতে হবে না, বসবেন খ্যাতনামা কোনো কোম্পানি বা কোনো সরকারি অফিসের চেয়ারে, এমন স্বপ্নই দেখতেন।

কিন্তু স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল ২০১৬ সালে নাটোর এন এস সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে এমএ পাস করে এখনও মানুষের জমিতে কাজ করে যাচ্ছেন নজরুল।
গ্রামে কাজ না থাকায় তিনমাস ধরে তিনি শহরের এই হোটেলটিতে কাজ করছেন।
এম এ পাশ করার পর কিছুদিন স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দুই হাজার টাকা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন।
বাড়তি আয়ের জন্য অন্যের জমিতে কাজ করে যাচ্ছিল এ যুবক।

সরকারি বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদনের পর আবেদন করেছেন। ব্যাংক ড্রাফট আর পে অর্ডার করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, কাজ হয়নি।

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে চাকরির আবেদন করলেই ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ডেনোশন চায়।

কোথা থেকে দেবে নজরুল যার নূন আনতে পান্তা ফুরায় সে কিভাবে এতো টাকা দিবে তারপর ও পত্রিকায় জাজ মাল্টি মিডিয়ার সহকারী পরিচালক পদে চাকরির বিঞ্জাপন দেখে আবেদন করে নজরুল ইসলাম।

চাকরির শর্ত মোতাবেক ধার করজা করে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠান। চাকরি তো হয়নি উল্টো টাকা ফেরত চাইলে আসে প্রাণনাশের হুমকি সে টাকা শোধ করতে তাকে সন্ধ্যায় দুটি প্রাইভেট পড়ানোর পাশাপাশি হোটেলে কাজ নিতে হয়েছে।

উচ্চশিক্ষিত হয়েও চাকরি না পেয়ে এভাবে থালাবাসন ধুয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে বড়বড়িয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম।

সংবাদমাধ্যমকে গ্রামবাসী জানিয়েছেন , একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তবে ভাগ্যে ভালো কোনো চাকরি জুটেনি। তাই এ পেশা ছাড়তে পারছেন না।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ছাত্র নজরুল ইসলাম খুব গুছিয়েই নিজের জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস জানালেন। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শুধু কৃষিজমিতে মজুরীর কাজ করছি না, আমি যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেছি তা স্থানীয়রা জানেন। সে সুবাদে কয়েকটা টিউশনিও করি।

তবে ক্ষেতে কৃষিমজুরি কাজ কখনই ছেড়ে দেননি। তিনি বলেন, সংসারের সব ভরণপোষণের দায়িত্ব আমারই। তাই এ কাজ করতে আপত্তি নেই আমার।

নজরুল স্কুলজীবনের শিক্ষক আশরাফ আলী বলেন বড়বড়িয়া হাইস্কুল থেকে এস এসসি ও আহম্মেদপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নাটোর এন এস সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ( সম্মান) শ্রেনীতে ভর্তি হন।

সেখান থেকেই এম এ পাশ করেন। ছোট থেকেই ছেলেটা মেধাবী, অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছে। এখনও যেভাবে সংসার চালাচ্ছে, তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে গেছে।

স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, উচ্চশিক্ষিত যুবককে হোটেলে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করতে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। ওর জন্য ভালো একটা চাকরির চেষ্টা করছি আমি।

শীতের পুরো রাত হিমশীতল ঠান্ডা পানিতে হোটেলে কাজ করলেও একটি চাকরির স্বপ্ন দেখাটা এখনও ছাড়তে পারেনি নজরুল ।

কোনো কাজই ছোট নয় জানিয়ে নজরুল জানান, চাকরি না পেলে ক্ষেতমজুর বা হোটেলে কাজ করেই জীবন পার করে দিতে সমস্যা নেই তার।

হোটেলের অন্যান্য কর্মচারীরা বলেন, শীতের দীর্ঘরাত ১২ ঘন্টা একটানা থালাবাসন ধোয়া যে কত কষ্ট সেটা একমাত্র নজরুলই বলতে পারবে।
আমরা তাকে সামনে কাজ করতে বলি।

সে পরিচিতদের ভয়ে সামনে আসতে চায়না। বাবুর্চি খানায় লুকিয়ে কাজ করে। এমএ পাশ একটি ছেলেকে একাজে দেখে আমাদের খারাপই লাগে ভাই।। কেউ যদি নজরুল কে সম্মানজনক চাকরি দিতো। তাহলে বেচারী এই কষ্ট থেকে বেঁচে যেতো।

দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নজরুল তাদেরই একজন। নজরুলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন সচেতন নাটোরবাসী।
৩১-০১-২০২০

দয়াকরে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরী আরো খবর...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

Developed By VorerSokal.Com
newspapar2580417888