বগুড়ার শিবগঞ্জে জ্বর এবং সর্দি-কাশিতে মৃত্যুবরণকারী মাসুদ রানা (৪৫) নামে সেই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. গাওসুল আজিম চৌধুরী রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বরাত দিয়ে সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৮ মার্চ শনিবার তার মৃত্যুর পর তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে মাসুদ রানা যে গ্রামে মৃত্যু বরণ করেছেন শিবগঞ্জ উজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের সেই দাড়িদহ গ্রামের ১৫টি বাড়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানায়, বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকার কোরবান আলীর ছেলে মাসুদ রানা ঢাকায় ব্যবসা করতেন। তার স্ত্রী সাজেদা বেগম শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ গ্রামে টিএমএসএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় অফিস সহকারি হিসেবে কর্মরত। তিনি তার তাঁর এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে অফিসের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
সাজেদা বেগম জানান, তার স্বামী মাসুদ রানা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ মার্চ তিনি বগুড়ায় আসেন। প্রথমে তিনি তার গ্রামের বাড়ি কাহালুর মুরইলে যান। এরপর দাড়িদহে তার কাছে আসেন। সেখানে তার অসুস্থতা বেড়ে গেলে তিনি স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে স্বামীকে খাওয়ান। কিন্তু তার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে তিনি উন্নত চিকিৎসার আশায় বগুড়ায় সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করেন কিন্তু কোন সাড়া পাননি। পরে শনিবার সকালে তিনি করোনা আইসোলেশন ইউনিট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হট লাইনে ফোন দেন। এরপর ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা.শফিক আমিন কাজল শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে জানান। তারপর সকাল ১০টার দিকে একজন চিকিৎসক মাসুদ রানাকে দেখতে যান কিন্তু ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তারকনাথ কুণ্ড জানান, সর্দি-কাশি এবং জ্বরের লক্ষণ থাকায় মৃত মাসুদ রানার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
এদিকে মাসুদ রানার মৃত্যুর পর করোনাভাইরাসে তার মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দাড়িদহ গ্রামের ১৫টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে। তবে গ্রামবাসী মৃত মাসুদ রানার লাশ ওই গ্রামে দাফনে বাধা প্রদান করে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে গ্রামের একটি মাজারের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. গাওসুল আজিম চৌধুরী জানান, গত ২৮ মার্চ শনিবার সকালে মাসুদ রানার মৃুত্যর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছিল। তার ফলাফল আইইডিসিআর থেকে ৩০ মার্চ সকালে ই-মেলে সিভিল সার্জনের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাতে দেখা যায় মাসুদ রানা নামে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। অর্থাৎ তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply