মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈলে দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের এক নেতাকে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। রাণীশংকৈল থানার ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, ২৫ এপ্রিল শনিবার দুপুরে দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র শাহা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন রাণীশংকৈল পৌরসভা মেয়রের বিরুদ্ধে। অভিযোগে মেয়র আলমগীর সরকার সহ প্রবীর দত্ত, মাজহারুল ইসলাম ও অমিত বসাককে আসামি করা হয়েছে। পৌর মেয়র আলমগীর সরকার রানীশংকৈল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। রাণীশংকৈল উপজেলা দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র শাহা সাংবাদিকদেরকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে তাদের এলাকায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে ঐ সব দোকানের কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, প্রায় একমাস ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে বেতনভাতাও দিচ্ছেন না মালিকরা। এতে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে কর্মচারীদের। বেতনভাতার দাবিতে গত বুধবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে দোকান ও প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে রাণীশংকৈল চৌরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে সকল দোকানের কর্মচারীরা। এ সময় দোকান কর্মচারীরা বিভিন্ন বক্তব্য দেন। “পরে ইউএনও মৌসুমী আফরিদা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না এসে আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।” প্রদীপ চন্দ্র শাহা বলেন, “দোকান কর্মচারীদের মাঝে ত্রাণ তহবিল দেওয়ার জন্য পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশ্বাস দেন। ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে মেয়র ও তার লোকজন আমাদের কাছ থেকে কয়েকবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেন। কিন্তু ত্রাণ সামগ্রী দেননি।” প্রদীপের অভিযোগ, “শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে মেয়র আলমগীর মোবাইল ফোনে আমাকে অকথ্য ভাষা গালিগাজালজ করেন এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার বাড়িতে আমাদের সংগঠনের সবাইকে ডাকেন। আমরা তার বাড়ি গেলে সকলের সামনে মেয়র আমাকে ও কোষাধ্যক্ষ সাগর সাহাকে বেধরক মারপিট করেন। মেয়রের লোকজনও মারপিট করে।” পরে সঙ্গে থাকা অন্যা্ন্য কর্মচারীরা তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে রানীশংকৈল হাসপাতালে ভর্তি করে বলে প্রদীপ জানান। এ ব্যাপারে মেয়র আলমগীর সরকার সাংবাদিকদেরকে বলেন, “দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মচারীরা বেতনভাতা পায়নি বিষয়টি আমাকে অবগত করা হলে আমি তাৎক্ষণিক মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করি। এরপর মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে ২৫ এপ্রিল শনিবার বসার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও আমার পক্ষ থেকে দোকান কর্মচারীর দেড় শতাধিক ব্যক্তির মাঝে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।”মেয়র বলেন, সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা গত বুধবার বেতনভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। সেই আন্দোলন থেকে বক্তব্যে মেয়রের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।“তাদেরকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, তারপরও তারা প্রকাশ্যে বলল ত্রাণ দেইনি; এ বিষয়ে কথার বলার জন্য শুক্রবার রাতে ঐ সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ শাহাসহ অন্য নেতৃবৃন্দকে আমার বাড়িতে ডেকে আনা হয়। এখানে কাউকে মারপিট করা হয়নি, তারা উচ্চস্বৈরে কথা বললে ধাক্কাধাক্কি হয়।” রাণীশংকৈল দোকান মালিক সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল বসাক সাংবাদিকদেরকে বলেন, “মাস ভিত্তিক নয়, আমাদের এখানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হয় কর্মচারীদের। লকডাউনের কারণে প্রায় মাসখানেক ধরে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লকডাউনের সময় প্রত্যেক কর্মচারীকে এক হাজার করে টাকাও করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরও অন্যান্য দিক দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “পৌরমেয়র আলমগীর সরকারের হস্তক্ষেপে ২৫ এপ্রিল শনিবার কর্মচারীদের সাথে বসার সিদ্ধান্ত হয়। মেয়রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২৩ এপ্রিল কর্মচারীরা উপজেলার সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগসহ আন্দোলন করে কর্মচারীরা। কর্মচারীরা আমাদেরই মানুষ, তাদেরকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু তারা আন্দোলন ও আমাদের অপমান করা ঠিক করেনি।” রাণীশংকৈল থানার ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, পৌর মেয়র আলমগীর সরকারসহ আরও তিন জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, “মেয়র আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে মারপিট করার একটি অভিযোগ আমার কাছে দিয়েছিল দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। এরপর আমি তাদেরকে থানায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply