বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে বিপর্যস্ত বিভিন্ন দেশ। গৃহবন্দী সারাদেশের মানুষ। করোনাভাইরাস বিপর্যয়ে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। দেশের এই ক্রান্তিকালে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় স্বল্প মূল্যে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সূর্যের হাসি ক্লিনিকের সূর্য এখন রাহুগ্রাসে আক্রান্ত। এ বছর ৩০ জুনের পর থেকে ফরিদপুর জেলার ৩টিসহ দেশের ১৫৮টি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক। এতে করে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে মানুষ। আর বেকার হবে ক্লিনিকটির হাজার হাজার কর্মী।
১৯৯৭ সাল থেকে ৬৪টি জেলায় ৩৯৯টি ক্লিনিক দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে সূর্যের হাসি ক্লিনিক নামে সরকারের সহযোগী সংস্থা হিসেবে তৃণমূলের প্রায় তিন কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছিল ২৫ টি এনজিও’র মাধ্যমে। ২০১৮ সাল থেকে এনজিওগুলোকে বিলুপ্ত করে ৩৯৯টি ক্লিনিকের মধ্যে ৩৬৯টি ক্লিনিক নিয়ে সূর্যের হাসি নেটওর্য়াক দায়িত্ব গ্রহণ করে।
শুরুতে সূর্যের হাসি নেটওর্য়াক সকল স্টাফকে চাকরি স্থায়ীকরণসহ প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, স্বাস্থ্য বিমা ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে কোম্পানিতে রুপান্তরিত করে। পরবর্তীতে সবার অগোচরে কর্মসূচি টেকসই করার নামে ২৫টি ক্লিনিক স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং ৫১টি ক্লিনিককে নামে মাত্র স্যাটেলাইট ক্লিনিকে রুপান্তর করে অন্য ক্লিনিকের সাথে অঙ্গিভূত করে মোট ৭৬টি ক্লিনিককে বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি জানা যায়, এ বছরের ৩০ জুনের পর ১৩৪টি ক্লিনিক রেখে ৯০টি ক্লিনিক স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং ৬৯টি ক্লিনিককে নামে মাত্র স্যাটেলাইট ক্লিনিকে রুপান্তর করে অন্য ক্লিনিকের সাথে অঙ্গিভূত করে আরো ১৫৮টি ক্লিনিককে বন্ধ করার মৌখিক আদেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এভাবে মোট ২৩৫টি ক্লিনিক বন্ধ করা হচ্ছে। ফলে সংবিধান সম্মত জনগনের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর জেলায় ৩টি ক্লিনিকের মধ্যে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী ক্লিনিককে বন্ধ করার মৌখিক আদেশ দেয়া হয়। ক্লিনিক ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সূর্যের হাসি ক্লিনিকে স্বল্পমূল্যে মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন সেবা, শিশু স্বাস্থ্য, বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বল্পমূল্যে প্যাথলজি পরীক্ষা, স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিনেশন সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বন্ধ হয়ে গেলে তৃণমূলের মানুষ স্বল্পমূল্যের এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
ক্লিনিক বন্ধের বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সর্দার মো. হান্নান বলেন, ‘ক্লিনিকগুলো বন্ধ হলে তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবায় আমাদের সাময়িক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই আমরা শূন্যস্থান পূরণে চেষ্টা করবো। তৃণমূলে লোকবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মুশফিকুল আজম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ‘আগামী ৩০ জুন থেকে ক্লিনিকগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি ঠিক আছে।’ তবে কেন বন্ধ করা হচ্ছে? কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরবর্তীতে কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিকুল আজম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কমিউনিকেশন অফিসার মি. মুনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করুন।’ মুনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে লিখিত আকারে প্রশ্নগুলো পাঠানো হলেও এ পর্যন্ত তার জবাব পাওয়া যায়নি।
১৫৮ টি ক্লিনিক বন্ধের বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলি নূর জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হবে।’
সূর্যের হাসি ক্লিনিকের কর্মরতদের সরকারের কাছে দাবী দেশের এই ক্রান্তিকালে ক্লিনিকগুলো বন্ধ হলে যেমন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে দেশের মানুষ তেমনি বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। মানবেতর জীবনযাপন করবে কর্মরত পরিবারের প্রায় ১০ হাজার সদস্য।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply