মোঃ মজিবর রহমান শেখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,ঠাকুরগাঁও জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারে লিচুর তেমন একটা দাম না থাকায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ ছাড়া করোনার প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনও লিচু কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই লিচুর বাগান মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা সরকারের সহযোগীতা কামনা করছেন। এ দাবীর প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগ। ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় প্রতিটি বাগানেই এ বছর লিচুর ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গাছে গাছে মিষ্টি ও রসালো স্বাদের বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি লিচু। অনেক বাগানে এরই মধ্যে লিচু পাড়তে শুরু করেছেন বাগান মালিকরা। তবে লিচুর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই বাগান মালিকদের মুখে। এ বছর দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা গোবিন্দনগর এলাকার বাগান মালিক কামাল চৌধুরী ও মাহবুব আলম জানান, মৌসুমি ফল লিচু বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই সারা বছরের খরচ চলে তাদের। তাই সারা বছর বাগান পরিচর্যা, পোকা দমনে কীটনাশক, সেচসহ অনেক খরচ ব্যায় করতে হয় তাদের এ বছর তার ব্যাতিক্রম হয় নাই। লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বাইরের জেলার পাইকাররা কেউ আসতে পারে নাই, তাই বাগান বিক্রি হয় নাই। করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থানীয় বাজারেও লিচুর তেমন চাহিদা নেই। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ লোহাগাড়া এলাকার লিচু বাগান মালিক জনি জানান, তার বিভিন্ন জাতের ৯০টি লিচুগাছ রয়েছে। এ বছর প্রতিটি গাছে বেশ ভালো লিচুর ফলন হয়েছে। গত বছর ওই একই বাগান থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বছর লিচুর স্থানীয় বাজারে ক্রেতা অনেক কম। মুন্সিরহাট আদিবাসী এলাকার লিচু বাগান মালিক মাইকেল টুডু জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনও লিচু কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। গতবছর প্রতিহাজার লিচু পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। কিন্তু এ বছর সেই লিচুর দাম নেমে এসেছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এদিকে সময়মতো লিচু বাজারজাত করা না গেলে এ লিচু গাছেই পঁচে যাবে। এ বছর জেলার ৩ হাজার হেক্টর জমির লিচুর বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির লিচুর বাগানে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার মেট্রিক টন। ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও বাগান মালিক সমিতির আহবায়ক মামুনর রশিদ জানান, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ছোট বড় প্রায় তিন হাজার বাগান মালিক করোনার প্রভাবের কারণে লিচুতে লাভ করতে পারবেন না। বাগানিরা প্রনোদণার দাবি করেছেন। জেলা বাগান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে শিঘ্রই স্বারকলিপি প্রদান করা হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন সাংবাদিকদেরকে জানান, ভালো ফলন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলে প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও জেলায় লিচু চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই নতুন নতুন বাগান করছেন। এতে জেলায় লিচু চাষ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাগান মালিকরা যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে। এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সরকারি প্রণোদনাসহ সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply