বেলাল হোসেন নিউজ ডেক্স: সারা দিন সংযমের পর সন্ধ্যায় সংযোমের বাঁধ ভেঙে যায় অনেকেরেই। অতিরিক্ত খেয়ে হাঁসফাঁশ করেন অনেকে।
সুস্থ থাকতে সারা দিন রোজা রাখার পর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্তনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ মাসুদা।
তিনি বলেন, “গরমকালে রোজা হওয়ায় শরীরে ঘাম হয় বেশি তাই ইফতারে দেহে পানির চাহিদা পূরণ করতে তরল-জাতীয় খাবার ও পানি পান করতে হবে।”
তবে একবারে বেশি পানি পান করা ঠিক নয়। ইফতারের পর থেকে খানিকক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
তাছাড়া কৃত্রিম জুস বা কোমল পানীয় পান না করে তাজা ফলের রস ও বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দেন এই অধ্যাপক।
সারাদিন না খাওয়ার কারণে অনেকেই ইফতারের সময় একবারে বেশি করে খাবার খেয়ে থাকেন। যা মোটেও ঠিক নয়। দুপুরের পর থেকে মানুষের হজম ক্রিয়া দুর্বল হতে থাকে। তাই গুরুপাক-জাতীয় ও বেশি ভারী খাবার খাওয়া ঠিক না। তাছাড়া এই সময় বিপাক হারও হ্রাস পায়।
তাই বাড়তি খাবার খাওয়া অস্বস্তি ও বদহজম সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তেল, চর্বি-যুক্ত খাবার ও বাড়তি ক্যালরি শরীরে জমা বাঁধে। ফলে শরীর অসুস্থ হতে পারে।
ইফতারে খেজুর খাওয়া সবচেয়ে ভালো। মিষ্টি ফল হওয়ায় দ্রুতই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও এটা হজমকারী এনজাইম সরবারহ করে খাবার হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া যে কোনো ফল ইফতারে রাখা ভালো, আঁশ-জাতীয় ফল খাবার হজমে সাহায্য করে। খনিজ এবং ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে বলে জানান তিনি।
রোজার মাসে অনেকেরই ওজন বৃদ্ধি পায়। অনেকের চেহারায় আবার রুক্ষ মলিন ভাবে চলে আসে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন, “এর পেছনের কারণ হল অসচেতনতা।”
অনেকেই ইফতারে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত খাবার খেয়ে নেন অনেকে আবার পানি পান করেন কম। অসচেতনতার কারণে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টির ঘাটতি। যার ফলে একেক জনের এক এক সমস্যা দেখা দেয়।
স্বাস্থ্যকর ইফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইফতারে প্রথমে পানি পান করে যে কোনো মিষ্টি ফল ও শরবত গ্রহণ করা ভালো। তারপর পাঁচ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মূল খাবার খাওয়া শুরু করুন। কারণ মস্তিষ্কে খাবারের সংবেদন পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তাই ইফতার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যা মোটেও ঠিক না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়া ও শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা থাকে।”
ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার, যেমন- দুধচিড়া, দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেট ভালো রাখে। যারা বিরিয়ানি বা তেহেরি পছন্দ করেন তাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ ইফাতারে এসব খাবার হজমে সমস্যা করে গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পেট গরম করে এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়।
ইফতার শুরু করার সময় খুব বেশি তাড়াহুড়া করে খাওয়া উচিত নয়। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত। এতে খাবার ভালো মতো চিবিয়ে খাওয়া যায় ও হজমে সুবিধা হয়।
ইফতারের পর অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল পানীয় পান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে।
অনেকক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ইফতারের পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত যতটা সময় পাওয়া যায় তখন চা কফি কম পান এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে অল্প অল্প করে পানি পান ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।
এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply