শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দুপচাঁচিয়ায় ভাগ্নিকে ধ র্ষণের অ ভিযোগে খালু গ্রে ফতার উপজেলা নির্বাচন ২০২৪ নোয়াখালী,বেগমগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও শহীদ কামারুজ্জামানের সমাধীতে আরসিআরইউ’র শ্রদ্ধা বগুড়ার সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে আইফোন জিতলেন আরিফ শেখ দুপচাঁচিয়ায় জোহাল মাটাইয়ে ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাবনায় গৌরবদীপ্ত বিজয় দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে বগুড়ায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন ফাঁপোর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মেহেদী হাসান বগুড়ায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার সেন্টার পরিদর্শন দুপচাঁচিয়ায় বিউটি পার্লারে অভিযান জরিমানা

বগুড়া ধুনটের ছাত্রলীগ নেতা আবু সালেহ স্বপনের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩
  • ১২০ ভিউ টাইম

মিলন হোসেন, বার্তা সম্পাদক : বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা আবু সালেহ স্বপনের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ধুনট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু পদ বাণিজ্যে নয়, সাধারণ মানুষকে মারধরসহ নানা অভিযোগ আছে এই নেতার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, সংগঠনে পদ দেওয়ার নাম করে এ বছরের ১১ মার্চ সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অর্থ নেয়ার অভিযোগ করেন উপজেলার কালের পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ৪ পদবঞ্চিত ছাত্রনেতা। এমন অভিযোগ লিখিতভাবে জেলা ছাত্রলীগের কাছে করেছেন তারা। এতে করে ওই ছাত্র নেতাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি অভিযোগ দিয়ে এখন ওই চার নেতাই এলাকা ছাড়া। ২০১৯ সালে কালেরপাড়া ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি কালেরপাড়ায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলন হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির তালিকা প্রকাশ হয়। ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই তালিকা পোস্ট করেন। এছাড়া উপজেলার আরও কয়েকটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির তালিকা সেদিন প্রকাশ করেন আবু সালেহ। তালিকা প্রকাশের পরপরই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র নেতাদের মধ্যে। ঠিক সেই সময় বের হয়ে আসে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি। ক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেন, কমিটি গঠনের কোনো কিছু আগে থেকে জানানো হয়নি তাদের এবং নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কখনও ইউনিয়নে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। আবু সালেহ স্বপন টাকার বিনিময়ে গোপনে এই পকেট কমিটি গঠন করেছে। আর এসব বিষয় নিয়ে যখন পদবঞ্চিতরা বিভিন্ন জনের কাছে জানানোর চেষ্টা করেন, তখন তাদের হুমকি দেয়া শুরু হয়।

ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন আতিকুর রহমান। তিনি জানান, সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আমার কাছে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন আবু সালেহ স্বপন। এর আগে আরেক জনের কাছে থেকে ওই পরিমাণ টাকা নিয়েছেন তিনি। আমি গরু বিক্রি করে সেই টাকা যোগাড় করে দিয়েছি। কিন্তু পরে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি নেওয়াজ শরীফ নামে একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অথচ এই নেওয়াজ শরীফকে কেউ ছাত্র রাজনীতি করতে দেখেননি। কাওসার আহম্মেদ নামে আরেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার কাছেও সে টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু আমি টাকা দিয়ে পদ নিব না বলেছিলাম। তখন আবু সালেহ স্বপন আমাকে বলেছিলেন, টাকা ছাড়া কোনো পদ হয় না। পরে, টাকা নিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পর থেকে স্বপন আমাদের হুমকি দিতে থাকেন। বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আমাদের কাছে খবর দেয়, এটা নিয়ে যেন বেশি কথা না বলি। তার ভয়ে আমরা বাড়িতেও থাকছি না।

কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন তানভির আহম্মেদ সরকার। তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তানভির বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি কর্মী সম্মেলন হওয়ার পর আমাদের কাছে সিভি নেয়া হয়। পরে স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি খরচের কথা জানান। তখন বড় ভাই হিসেবে অর্থ চাওয়ায় তাকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি আরও টাকা চান। তখন আমি বেশি টাকা দিতে অপরাগতা জানাই। আর ওই টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর তো ২৭ ফেব্রুয়ারি কমিটি ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ দিয়ে আমরাই এখন প্রাণনাশের ভয়ে আছি। এ জন্য বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকছি স্বপনের লোকজন আমাদের সামনে পেলে ক্ষতি করবে। আমরা তো নৌকার জন্য রাজনীতি করি। টাকা দিয়ে পদ বানিজ্য করতে চাইনি। আমাদের দাবি, স্বপনের বিরুদ্ধে তদন্ত করুক। তদন্ত করলেই ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয় ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে ওই কমিটি বহাল আছে। এর মধ্যে আবু সালেহ স্বপন গত বছর আগস্টে বিয়ে করেন এক কলেজ ছাত্রীকে। বিবাহিত হওয়ার প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি স্বপদে রয়েছেন।

ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, আবু সালেহ স্বপন আগে ধুনট-শেরপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের কারণে সংসদ সদস্য স্বপনকে বিতাড়িত করেন। পরে স্বপন যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর অনুসারীদের সাথে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পদ দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর রফিকুল ইসলাম মঞ্জু ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

জাকারিয়া খন্দকার বলেন, আমাকে গ্রুপিং করে সরানো হয়েছে। তারা বলে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে, আমি সন্তোষজনক জবাব দেয়নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। অথচ এই আবু সালেহ স্বপনের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটা, অপহরণ, সাধারণ মানুষকে মারধর করার একাধিক অভিযোগ আছে। যাকে অপহরণে মামলা হয়েছিল, পরে তো সেই মেয়েকেই বিয়ে করেন স্বপন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ধরে নিলাম আমি টাকা আত্মসাৎ করেছি। তাহলে এখন স্বপন যে টাকার বিনিময়ে কমিটি দিচ্ছেন, তার কি হবে ? আবার বিয়ে করেও ছাত্রলীগের পদে আছে। এখন কেন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না ?

তবে, অভিযোগ রয়েছে এই যুবলীগ নেতা আবু সালেহ স্বপন তার ফেসবুকে মানুষকে হুমকি- ধামকি সহ অশ্লীল-অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন বলেন, ‘‘আমি উপজেলা ছাত্রলীগে সাংগঠনিকভাবে পূর্নগঠনে কাজ করছি। যারা কখনও ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়, তারাই তৃতীয় কারো দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে আমার সম্মানহানীর ষড়যন্ত্র করছে। ’’

তিনি বিবাহিত কি না এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিবাহিতরাও ছাত্র রাজনীতি করছে। আমি বিবাহিত না। ’’

এই বিষয়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব সাহা বলেন, ‘‘আবু সালেহ স্বপনের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় হবে’’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

দয়াকরে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরী আরো খবর...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

Developed By VorerSokal.Com
newspapar2580417888