মিলন হোসেন, বার্তা সম্পাদক : ঈদের ছুটিতে বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্তা কুমার (৩০) খুন হয়েছেন। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ডাকাতির চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) রাতের কোনো এক সময় এই ডাকাতি চেষ্টা এবং খুনের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে, সোমবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
নিহত প্রশান্ত বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া গ্রামের মৃত প্রাণকৃষ্ণ আচার্য্যর ছেলে।
লাশ উদ্ধার ও ডাকাতি চেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই মিন্টু নামের এক নৈশপ্রহরীকে খুঁজছে পুলিশ। রবিবার রাতে প্রশান্তের সাথে তার ডিউটিতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি রাতে ডিউটিতে ছিলেন না। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত প্রশান্তের ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্য্যকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় প্রধান ডাকঘর অবস্থিত। ঈদের ছুটিতে এই ডাকঘরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছিলেন অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্য্য। তার ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্য্য ডাকঘরের অভ্যন্তরে একটি দোকান পরিচালনা করেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে তিনি ডাকঘরে পৌঁছে তার ভাইকে ডাকতে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গোবিন্দ থানায় সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ডাকঘরের পূর্ব পাশের বারান্দার মেঝেতে পাতানো নিজের বিছানায় প্রশান্তের মরদেহ পড়ে আছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও কাপড়ের ছেড়া অংশ দিয়ে ডান হাত বাঁধা ছিল। দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন ফাইলপত্র তছনছ করেছে। তারা ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন দিয়ে ভল্টের দরজায় ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৪ ইঞ্চি প্রস্থ করে কেটে ফেলে। কাটা ওই অংশ দিয়ে তারা ভল্টের পুরো দরজা খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ঘটনা জানার পর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা নিহত অফিস সহায়ক প্রশান্তের সহযোগিতায় ভেতরে প্রবেশ করে। শুরুতে দেয়াল টপকে ডাকঘর চত্বরে প্রবেশ করলেও ভবনের ভেতরে ঢুকতে তাদের কোনো দরজা কাটতে বা তালা ভাঙতে হয়নি। এছাড়াও প্রশান্ত যেখানে বিছানা করে শুয়ে ছিলেন, সেখানকার কলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া ছিল। দুর্বৃত্তরা যেসব ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করে ভল্ট কাটার চেষ্টা চালায় তার আলামত দেখে পুলিশের ধারণা, আগে থেকেই তারা রেকি করে গেছে।
তাছাড়া ডাকঘরের সিসিটিভির ক্যামেরাগুলো আগে থেকেই নিস্ক্রিয় করা ছিল। তবে একটি ক্যামেরায় একজন দুর্বৃত্তকে মুখোশ পরা অবস্থায় ডাকঘরের ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া কিছু সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে।
বগুড়া প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার রাকিব বিশ্বাস জানান, ঈদের ছুটির কারণে ডাকঘরে কর্মরত তিনজন মুসলিম নৈশপ্রহরী জাহিদুল, বকুল এবং সাইফুল ছুটিতে ছিলেন। এ কারণে অফিস সহায়ক প্রশান্ত ও তার সাথে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল (ইডি) কর্মচারী মিন্টু দায়িত্বে ছিলেন। সামান্য কিছু টাকা-পয়সা খোয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টা। দুর্বৃত্তরা ভল্টের কিছু অংশ কাটলেও টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিতে পারেনি। পুলিশের একাধিক দল জড়িতদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে।
নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়কের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply