রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
২ আগস্ট রোজ বুধবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দুই কৃষকলীগ নেতা চানমিয়া বয়াতী ও হেলাল বেপারীর বিরুদ্ধে দুস্ত অসহায়দের ভিজিডি কার্ড ও সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত চান মিয়া গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরশ উল্লা পাড়ার মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে। সে দৌলতদিয়া ৯ নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সাধারণত সম্পাদক। হেলাল বেপারী দৌলতদিয়া ৭নং ওয়ার্ডের ইছাক মুন্সী পাড়ার ইউছুফ আলী বেপারীর ছেলে। হেলাল দৌলতদিয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
জানা যায়, হেলাল ও চান মিয়া ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে দুস্থ অসহায় পরিবারের মাঝে সরকারী চাউল বিতরণে ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড বিতরণ প্রকল্পের আওতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করন ও সরকারী ঘর পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই দুই নেতা বিভিন্ন কৌশলে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৯ ও ৭ নং ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক গরীব অসহায় নারী পুরুষের কাছ থেকে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তারা কাউকে কোন কার্ড ও ঘর নাদিয়ে হেলাল বেপারী গা-ঢাকা দিয়েছেন ও চান মিয়া অসুস্থতার ভান ধরে বাড়ী থেকে বের হন না। ভুক্তভোগী অসহায় ওই লোকজন টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই নেতারা তাদের মারপিট করে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায় বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী নারী পুরুষরা জানায়।
গত শনিবারে দৌলতদিয়া ৯ নং ওয়ার্ডের পরশ উল্লা পাড়ায় সরে জমিন অনুসন্ধান কালে ওই পাড়া ও এর আশপাশ এলাকার লোকজন এ সব তথ্য জানায়। ওই পাড়ার ঘোড়ার গাড়ী চালক মুছা মোল্লার স্ত্রী লাবনী আক্তার (৩৫ হাজার) মমিন শেখের স্ত্রী (৫ হাজার ১শত), মকদুম শেখের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫ হাজার), খলিল মোল্লার ছেলে শহিদ মোল্লা (৫ হাজার), আলীমদ্দিনের ছেলে আঃ কুদ্দুস (৪ হাজার) তার ভাই মোতালেব (৫ হাজার) সোবান শেখ (৫ হাজার), রোকন লস্কার (৫ হাজার), মুঞ্জু শেখ (৫ হাজার), ফজল শেখ (৪ হাজার), কহিরুন (৫ হাজার), সুফিয়া বেগম (৫ হাজার), ডালিম বেগম (৫ হাজার) টাকা চান মিয়ার কাছে দিয়ছেন বলে জানায়। এসময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো প্রায় অর্ধশতাধিক উপস্থিত নারী-পুরুষ বলেন, চান মিয়া ও হেলাল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার প্রায় একশত গরীব অসহায় মানুষকে চাউলের কার্ড ও সরকারী ঘর দেয়ার কথা বলে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা নেয়ার পর প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় গরীব মানুষ ঘর ও চাউলের কার্ড না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তারা আমাদের মারপিট ও থানা পুলিশে আটকের ভয় দেখায়।
এ সময় মুছা মোল্লার স্ত্রী লাবনী আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঘোড়ার গাড়ী চালিয়ে কোনমতো সংসার চালায়। আমার থাকার ঘর না থাকায় চান মিয়া একটি সরকারি ঘর দেয়া বাবদ ৩০ হাজার ও ভিজিডি কার্ড বাবদ ৫ হাজার মোট ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে ঘর ও কার্ড কছুই দেয় না। টাকা ফেরত চাইলে নানা রকম হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়।
শনিবার দুপুরে চান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এই ওয়ার্ড কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ভিজিডি কার্ড দেয়ার কথা বলে হেলাল আমার মাধ্যমে ১৫-২০ মহিলার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া আরো কত জনের কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে তা আমার জানা নাই। টাকা নেয়ার পর হেলাল বাড়ী থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ওই মহিলরা আমার কাছে টাকার দাবি করছে। আমি তাদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছি।
সরকারী ঘর ও চাউল দেয়ার প্রলোভনে টাকা নিয়ছেন কেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন সরকারী অফিসের লোকজনের সাথে হেলালের সম্পর্ক থাকায় হেলাল তাদের কাছ থেকে ঘর ও কার্ড এনে দিতে পারবে বলে মহিলাদের কাছ থেকে অফিসের খরচ বাবদ ওই টাকা নেয়া হয়ছে। এ সময় হেলাল বেপারীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান শিকদার বলেন, চান মিয়াসহ কিছু লোক নব্য আওয়ামীলীগে যোগদান করে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেলালের যোগ সাজশে গরীব অসহায় মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে অনেক টাকা আত্মসাত করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আইনের আওতায় এনে ওদের দৃষ্টান্ত মূলক সাজা হওয়া উচিত। গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্লা ক্ষোভের সাথে বলেন, ওই দুর্নীতিবাজ কিছু নেতা কর্মীদের কারনে সাধারণ মানুষের কাছে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দলীয় মিটিংয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ভিজিডি কার্ড ও ঘর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply