মো:বেলাল হোসেন আকাশ স্টাফ রিপোটারঃ বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহারের জমিদারের বাড়িটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির নাম সাহেব বাড়ি। কেউ বলে খান সাহেব বাড়ি, যে যেই নামেই ডাকুন না কেন এটাই হলো জমিদার বাড়ি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে গুনাহার ইউনিয়নে খান বাহাদুর মোতাহার হোসেন খান এর বাড়ি এটি। স্থানীয় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রায় ২শ’ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে ব্রিটিশ সরকারের তরফে জমিদার হিসেবে মোঃ সুন্দর আলী খান গুনাহার গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র রমযান আলী খান জমিদারি
পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী জাহানুন নেছার নামে তাদের জমিদারির নামকরণ করেন জাহানুন নেছা স্টেট। রমযান আলী খানের দুই পুত্র মিয়াযান খান ও মেহেরজান খান। মিয়াযান খানের ৩ পুত্র কওছর আলী খান, আব্দুল মজিদ খান ও মমতাজ আলী খান। অপরদিকে মেহেরজান খানের ৩ পুত্র আব্দুল লতিফ খান, মোতাহার হোসেন খান (পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার তাকে খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করেন) ও মহসিন আলী খান এবং ৩ কন্যা জোবেদা খাতুন, আমেনা খাতুন ও আখতারুন্নেছা। জোবেদা খাতুনের কন্যা হামিদা খাতুন পুলিশের সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদার শাশুড়ি। আমেনা খাতুনের পুত্র মরহুম আব্দুল রশিদ খান (আলী খান) গুনাহার ইউনিয়নের আজীবন চেয়ারম্যান ছিলেন। আখতারুন্নেছার কন্যা আনোয়ারা খাতুন (হাছনা) এর পুত্র খন্দকার আজাদুর রহমান সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। খান বাহাদুর মোতাহার হোসেন খান ২ পুত্র ও ৫ কন্যার জনক তিনি তার জীবনদ্দশায় প্রথম পুত্র ওমর হায়দার খানের নামে তালুচ উচ্চ বিদ্যালয় ও তালুচহাট প্রতিষ্ঠা করেন। তার দ্বিতীয় পুত্র জোবায়ের হায়াৎ খান গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ডাকঘর, কন্যা রওনক মহল দিলরুবা বেগম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (হাসপাতাল) স্থাপন করার জন্য জায়গা দান করেন। তার বোন আমেনা খাতুনের পুত্র আব্দুর রশিদ খান গুনাহার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কন্যা রওনক মহল মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক সনদপত্র প্রাপ্ত হন। খান বাহাদুর মোতাহার হোসেন খান ব্রিটিশ সরকার অধীনে বাংলা বিহার উড়িষ্যার এক্সসাইজ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪১ সালে তখনই তিনি গুনাহার গ্রামে এ বিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, তিনি ১৮৯৪ সালে এই গুনাহার গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫২ সালের ২ জুলাই নিজ বাসভবনেই ইন্তেকাল করেন। এদিকে প্রায় ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে চলেছে।
ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটির চারপাশ দিয়ে যে পরিমাণ জায়গা জমি রয়েছে তাতে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে দেশী বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে বলে এলাকাবাসী অভিমত ব্যক্ত করেন।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply