মিলন হোসেন / স্টাফ রিপোর্টার :
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়কে বকশিশের ৫০ টাকা কম দেয়ার কারণে রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেয়ায় আহত রোগীর মৃত্যু হয়। অভিযুক্ত মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু’কে (বৃহস্পতিবার) ১১ নভেম্বর ভোরে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১২ এর একটি আভিযানিক দল।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলেন, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার কুমিরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত জয়নুদ্দিনের ছেলে মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু। সে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের দৈনিক মজুরী ভিত্তিক পরিছন্ন কর্মী।
জানা গেছে, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টায় দৈনিক মুজুরী ভিত্তিক কর্মী মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে রোগীর স্বজন বকশিশের ৫০ টাকা কম দেয়ায় চিকিৎসারত গুরুতর আহত এক রোগীর মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে। এবং গুরুতর আহত রোগীর মৃত্যু ঘটে। উক্ত রুগী স্কুলছাত্র শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশ গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, বয়স (১৭)। সে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গ্রীল ওয়েল্ডিং এর কাজ করতেন এবং নিজের পড়াশোনার ও পরিবারের খরচ চালাতেন । গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটাতে মোটরসাইকেলের সাথে দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আনুমানিক রাত ১০ টায় অভিভাবকরা বগুড়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। উক্ত হাসপাতালে পৌছালে জরুরী বিভাগের হাসপাতালের দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মী মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের নিকট চিকিৎসা দালালীর নামে ৫০০ টাকা দাবি করে এবং পরবর্তীতে ২০০ টাকায় রাজি হয়। ভিকটিমকে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক রোগীকে জরুরী সেবা দিয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে দেন এবং ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন।
কিন্তু বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেয়া হয়। অতঃপর ভিকটিমের অভিভাবকের নিকট টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় তাকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তখন সে আরো টাকা দাবী করলে শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশের অভিভাবক বলে আমাদের কাছে আর কোন টাকা নেই। তখন মোঃ আসাদুল ইসলাম ধলু উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালি গালাজ করে। এরপরেই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিম মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তখন সুযোগ বুঝে মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু পালিয়ে যায় । উক্ত বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
নিহত শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশ মৃত্যু বরণের ঘটনায় বুধবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১২টায় বগুড়া সদর থানায় মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু’কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মোঃ আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিম শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশ চিকিৎসারত অবস্থায় অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করায় বিষয়টি স্বীকার করে। তিনি বিগত ৬ বছর যাবত উক্ত হাসপাতলে দৈনিক মুজুরী ভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে। সে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরী আউটডোরে রোগীদেরকে ট্রলিতে করে পৌঁছে দেয়ার কাজ করতো।
সে এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের নিকট হতে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতো। ঘটনাটি ঘটার পর সেখান থেকে সে প্রথমে নওগাঁ ও পরবর্তীতে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply