বেলাল হোসেন নিউজ ডেক্স: রাজধানীতে হঠাৎ করেই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এতে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে শামিয়ানা ভেঙে এক মুসল্লি নিহত হন। আহত হয়েছেন ১৫ জনেরও বেশি। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া ঝড়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় দেয়ালচাপায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজনের নাম বুলবুল (২৪), অপর দুইজনের পরিচয় জানা যায়নি। অপরদিকে, ইফতারের আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে চারজন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, ইফতারের পর নামাজে দাঁড়ালে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে বাইতুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ পাশে বানানো সামিয়ানা ভেঙে পড়ে। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে অন্য মুসল্লিরা এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
নিহত মুসল্লির নাম শফিকুল ইসলাম (৩৫)। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে আসা শ্যালক সাইফুল ইসলাম জানান, তারা দুজনে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইফতার করেন। ইফতার শেষে মাগরিবের ফরজ নামাজ আদায় করেন। এরপর সুন্নত নামাজের নিয়ত করার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় চারদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই নামাজের জন্য বানানো উপরের প্যান্ডেল তাদের ওপর ভেঙে পড়ে। আহতরা হলেন- মো. রফিউজ্জামান, মনিরুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, জানে আলম, সাদিকুর রহমান সবুজ, তারেক রহমান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সহকারী উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম, মাসুদ, জহিরুল ইসলাম, সজীব, বিপ্লব, আমানুল্লাহ, বাবুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন জানান, সবাই জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ গুরুতর আহত নন। এদিকে বাড্ডা জোনের এসি এলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে জানান, উত্তর বাড্ডার প্রাণ আরএফএল প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন একটি দেয়াল ধসে একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, ইফতারের আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকায় বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত হজরত আলীর ছেলে রেজাউল হোসেন (৪০) ও মোতালেব হোসেনের ছেলে মো. মুসা (৩৫)। আহত হয়েছেন একই এলাকার হজরত আলী (৬০)। তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ধানের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে রেজাউল ও মুসা ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হজরত আলীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
অপরদিকে নওগাঁর পোরশা উপজেলায় বজ্রপাতে দুই ধানকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার গানুইর গ্রামে মালিপুকুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের গানুইর গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে শফিনুর রহমান বিষু (৩২) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার পিঠাইল গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে হাসান আলী (৩০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গানুইর গ্রামের মালিপুকুর মাঠে ধান কাটার কাজ করছিলেন বুলবুল হোসেন, শফিনুর রহমান ও হাসান আলীসহ কয়েকজন। দুপুরের পর ছিল আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অন্ধকার নেমে আসে এবং ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ করেই বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই শফিনুর রহমান ও হাসান আলী মারা যান। এ সময় বুলবুল হোসেন আহত হন। তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পোরশা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বজ্রপাতে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।