দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। একটু একটু করে উত্তাপও বাড়ছে তার। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের মধ্যেও বিশ্বকাপের মৌতাতে আচ্ছন্ন টাইগাররা। ক্রিকেটের এই শ্রেষ্ঠ মঞ্চে যাওয়ার আগে দলগত পরিকল্পনার বাইরেও ক্রিকেটাররা নিজেদের তৈরি করেছেন নিজের মতো করেই। দেশ ছাড়ার আগে সমকালের সঙ্গে বিশ্বকাপ আড্ডায় নিজেদের সে ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন টাইগাররা। বিশ্বকাপযাত্রী টাইগারদের ধারাবাহিক এই সাক্ষাৎকার পর্বে আজ থাকছে আবু জায়েদ রাহি। তার ভাবনা জেনেছেন সেকান্দার আলী
সমকাল: বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়াটা আপনার জন্য কতটা চমক ছিল?
রাহি: হ্যাঁ, চমক বলতে পারেন। খবরটা জানার পর ভালো লাগা কাজ করেছে। দারুণ একটা অনুভূতি আছে। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছি, বিরাট মঞ্চে খেলা। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এটা আরাধ্য বলতে পারেন।
সমকাল: কখন জেনেছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আপনাকে নেওয়া হয়েছে?
রাহি: ১৪ এপ্রিল। আগের দিনই এদিক-ওদিক থেকে কানে আসছিল হয়তো বা থাকতে পারি। নিশ্চিত খবর জানার পর খুবই ভালোই লেগেছে। এই অনুভূতি হওয়াটা স্বাভাবিক। এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
সমকাল: ওয়েস্ট ইন্ডিজে ও নিউজিল্যান্ডে ভালো খেলেছেন। সুইং ডেলিভারি দিচ্ছিলেন। এ কারণেই কি কন্ডিশন বিবেচনায় বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেলেন?
রাহি: ঠিকই বলেছেন। আমি চেষ্টা করি লাইন ও লেন্থ রেখে বল সুইং করাতে। যথেষ্ট পেস না থাকলে সুইং দিয়ে টিকে থাকতে হবে। কোচরাও বলেছেন, ‘যেহেতু তোমার পেস নাই, ঘরোয়া বলো আন্তর্জাতিক বলো যে কোনো জায়গায় টিকে থাকতে হলে সুইংটা ধরে রাখ।’ আমি কোচদের নির্দেশমতো এবার লিগে সুইং নিয়ে কাজ করে ফলও পেয়েছি।
সমকাল: বিশ্বকাপ দলে থাকায় আপনার ক্যারিয়ারকে কতটা এগিয়ে দেবে?
রাহি: অবশ্যই এগিয়ে দেবে। ইংল্যান্ডের উইকেট ভিন্ন। ওখানে খেলার সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব। ওখানে বাতাস থাকে, সুইং করানোর সুযোগ পাব। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারে।
সমকাল: টেস্টে তো বোলারদের বেশি স্বাধীনতা থাকে। বোলিংয়ের জোন বেশি পাওয়া যায়। ওয়ানডেতে অতটা থাকে না?
রাহি: আসলে আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়েছে টি২০ দিয়ে। টি২০-র পর টেস্ট দলে ডাক পেয়েছি। এখন ওয়ানডেতে সুযোগ পেলাম। টি২০ বেশি চার্জ করে ব্যাটসম্যানরা। টি২০ পারলে ওয়ানডে পারব না কেন। আমার বিশ্বাস, এই ফরম্যাটেও ধারাবাহিক হতে পারব।
সমকাল: বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কী?
রাহি: একটা পরিকল্পনা মাথায় আছে। তবে সব সময় নিজের পরিকল্পনামতো সব হয় না। দলের পরিকল্পনার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। সুযোগ পাব কি পাব না সেটাও বড় বিষয়। সুযোগ পেলে কতটুকু ভালো খেলতে পারি, তাও গুরুত্বপূর্ণ। একটা ম্যাচ পেলে ওখানেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমার ইচ্ছা অনেকদিন জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলা। এজন্য ছোট ছোট সুযোগগুলোকেও কাজে লাগাতে চাই।
সমকাল: কী ধরনের কৌশল নিয়েছেন?
রাহি: প্রথম কাজ হলো নিজের ওপর বিশ্বাস আনা। নিজের স্পটে বোলিং করতে জানতে হবে। এরপর ব্যাটসম্যানকে রিড করে ডেলিভারি দেওয়া। নিজের বোলিং কন্ট্রোল না থাকলে একটা মার খেলেই ঘাবড়ে যাব, চাপের মুহূর্তে ভালো করতে পারব না। এজন্য বলের ওপর একটা দখল প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আমি ওটা নিয়েই কাজ করছি।
সমকাল: স্কোয়াডের বাকি চার পেসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একাদশে জায়গা করে নেওয়া কঠিন হবে না?
রাহি: খুবই কঠিন। আমার আগে চারজন পেস বোলার আছে স্কোয়াডে। রুবেল হোসেনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। গত বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচ জিতিয়েছে। মুস্তাফিজেরও ভালো অভিজ্ঞতা আছে। মাশরাফি ভাই অটোমেটিক চয়েস। সাইফউদ্দিনও ভালো একটা ছন্দে আছে। এই চারজনকে নিয়ে বোলিং শক্তি অনেক। সেদিক থেকে আমার ম্যাচ খেলার সুযোগ একটু কম। তবে বলা তো যায় না, কন্ডিশনের কারণে আমারও খেলার সুযোগ আসতে পারে। বিশ্বকাপ লম্বা সময় ধরে হবে। ৯টা ম্যাচ, যে কোনো ম্যাচে যে কেউ খেলতে পারে। আমি সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে চাই। ম্যাচ খেলব কি খেলব না, ওটা টিম ম্যানেজমেন্ট দেখবে।
সমকাল: এতদিন টিভিতে বিশ্বকাপ দেখেছেন। দল ভালো খেললে দেশে বসে উদযাপন করতেন, এবার ড্রেসিংরুমে থাকবেন, হয়তো খেলবেন?
রাহি: ম্যাচ খেলি আর না খেলি, দল রেজাল্ট পেলে খুব ভালো লাগবে। দল জিতলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা ভালো থাকে। উৎসব উৎসব ভাব থাকে। যেমন ধরেন নিদাহাস ট্রফিতে ম্যাচ জয়ের পর উদযাপন হয়েছে। ড্রেসিংরুমে হয়। কখনও কখনও মাঠের ভেতরেও উদযাপন হয়।
সমকাল: এবার বিশ্বকাপ লিগ ভিত্তিতে, চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেমিফাইনালে যেতে হলে কম করে হলেও পাঁচটি ম্যাচ জিততে হবে?
রাহি: আমার মনে হয় গ্রুপে খেলার চেয়ে লিগ ভিত্তিতে খেলা হওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। এখানে ছোট দল বড় দলকে হারালে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। আমরা তিনটি বড় দলসহ পাঁচটি ম্যাচ জিতে পারব।
সমকাল: বাংলাদেশ দলটা বেশ অভিজ্ঞ। বিশ্বকাপ জয়ের এটাই সুযোগ মনে করেন?
রাহি: অবশ্যই। গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা দল আমরা। ড্রেসিংরুমে যখনই বিশ্বকাপ নিয়ে কথা হয়, সবাই বলে আমরা পারব, ভালো কিছু হয়ে যেতে পারে। মাশরাফি ভাইয়ের শেষ বিশ্বকাপ, এটাও কাজ করবে সবার ভেতরে। আমিও বিশ্বাস করি এবার হয়ে যেতে পারে।
সমকাল: বোলিংয়ে সমস্যায় পড়লে কীভাবে কামব্যাক করেন?
রাহি: কামব্যাক বলতে সিনিয়রদের সাহায্য নেই। এ ছাড়া অনেক দিনই তো ক্রিকেট খেলছি। এখন খেলাটাকে উপভোগ করার সময়। এখন ক্রিকেটকে উপভোগ করি। বাউন্ডারি খেলেও কিছু মনে হয় না। পরের বলেই ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করি, ভেঙে পড়ি না। বাজে জায়গায় বল ফেললে চার তো হবেই।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply